ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক বয়স্ক দিবস উপলক্ষে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ, ইসরায়েলের অবরোধ এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বয়স্ক ফিলিস্তিনিরা বর্তমানে এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি। খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের জীবনকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বয়স্কদের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য সংকট
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৩২১,০০০ ফিলিস্তিনি ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী। এ সংখ্যা পশ্চিম তীর ও গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৭৬ শতাংশ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছেন। এসব রোগীর নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োজন, কিন্তু চলমান অবরোধের কারণে ওষুধের প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসা সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি অচল, এবং অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
গাজায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাজার পরিস্থিতিকে “বিপর্যয়কর” বলে উল্লেখ করেছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার পাশাপাশি অব্যাহত অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সীমিত আকারে ঢুকলেও তা মানুষের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর ফলে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপুষ্টি ও রোগে মৃত্যুর হার দ্রুত বাড়ছে।
বয়স্ক ফিলিস্তিনিরা বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন কারণ তারা নিজেরা খাদ্য বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সক্ষম নন। অনেকের পরিবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত ঘরে আশ্রয় নিয়েছে বা বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। সেসব জায়গায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যসেবা নেই।
পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের চ্যালেঞ্জ
গাজা ছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বয়স্ক ফিলিস্তিনিরা গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন। ইসরায়েলের চেকপয়েন্ট ও চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে অনেকেই প্রয়োজনীয় সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারছেন না। ফলে সামান্য অসুস্থতাও অনেকের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক বয়স্ক রোগী শুধু হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে মারা যাচ্ছেন। ওষুধের ঘাটতি যেমন রয়েছে, তেমনি অ্যাম্বুলেন্সগুলোও অনেক সময় চেকপয়েন্টে আটকে যায়। এতে জরুরি রোগীদের প্রাণহানির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, গাজা ও পশ্চিম তীরে বয়স্ক ফিলিস্তিনিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী। তারা শুধু যুদ্ধ ও অবরোধের শিকারই নন, বরং মৌলিক চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তার অভাবে জীবন-মৃত্যুর লড়াই করছেন।
জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে সাহায্যের প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক বয়স্ক দিবসে যখন বিশ্বজুড়ে প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, তখন গাজার প্রবীণরা টিকে থাকার জন্য লড়াই করছেন। যুদ্ধ, অবরোধ ও চিকিৎসা সংকট মিলিয়ে তারা এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বয়স্ক ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। সূত্র: ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়