গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী অবিরাম বোমা বর্ষণ করে চলছে। এসব হামলায় সব উঁচু ভবন, তাঁবু, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার হাসপাতালগুলোতে ৬৮ জনের লাশ এবং ৩৪৬ জন আহতকে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নিহত হয়েছেন গাজা সিটিতে।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৮৭১ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজা সিটি থেকে নিয়মিত জোরপূর্বক উচ্ছেদ
ইসরায়েলের নির্বিচার ‘কার্পেট বোম্বিং’-এর কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকার উত্তরের গাজা সিটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বোমা হামলায় প্রতিদিন ডজন ডজন বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। পরিবারগুলো এক অজানা ভবিষ্যৎ নিয়ে বারবার হামলায় আক্রান্ত ও অতিরিক্ত জনাকীর্ণ দক্ষিণের আল-মাওয়াসি এলাকায় ছুটে চলছে। ফলে আল-মাওয়াসি এলাকায় এখন তিলধারণের ঠাঁই নেই। গাজায় যানবাহন না থাকায় বাসিন্দাদের স্থান পরিবর্তনও বর্ণনাতীত ভোগান্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে নারী-শিশুদের নিয়ে হেঁটেই চলতে হচ্ছে।
গাজার উপত্যকার প্রায় অর্ধেকের বেশি এখন ইসরায়েলের দখলে। এর মধ্য সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটিকে পুরোপুরি দখল করতে শহরটিকে খালি করছে দখলদাররা। সে জন্য নিয়মিত জোরপূর্বক উচ্ছেদ করছে বাসিন্দাদের।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মতে, শনিবার ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ অবরুদ্ধ এই শহরটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের অবিরাম বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গাজা সিটিতে প্রায় ৯ লাখ ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন, কিন্তু এই সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে জোরপূর্বক উচ্ছেদের কারণে।
দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়া একজন ফিলিস্তিনি খলিল মাতার বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করছি। আমাদের সঙ্গে অসুস্থ মানুষ আছে এবং আমরা জানি না কোথায় যাব। কোনো নিরাপদ এলাকা নেই।’
আল-মাওয়াসিতে চলে আসা এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, ‘পুরো এক সপ্তাহ ধরে আমরা আশ্রয়ের জন্য একটি জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমার একটি বড় পরিবার আছে, যার মধ্যে আমার সন্তান, আমার মা এবং আমার দাদি আছেন। কিন্তু কোনো তাঁবু পাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমাদের মাথার ওপর বোমা বর্ষণ হচ্ছে তা নয়, অনাহারও আমাদের গ্রাস করছে।’
বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে নেতানিয়াহুই একমাত্র বাধা
হামাসের হাতে এখনো বন্দি থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার বলছে, বন্দিদের ফিরিয়ে আনা এবং শান্তিচুক্তি করার পথে ‘একমাত্র বাধা’ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
‘হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছে, গত সপ্তাহে কাতারে ইসরায়েলের হামলা প্রমাণ করে যতবারই কোনো চুক্তি কাছে আসে, নেতানিয়াহু তা ভেস্তে দেন।
শনিবার নেতানিয়াহু বলেছেন, কাতারে হামাস নেতাদের নির্মূল করার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য প্রধান বাধা দূর করবে। তবে, জিম্মিদের পরিবার নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে তাদের প্রিয়জনদের ‘ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হওয়ার সর্বশেষ অজুহাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তারা বলে, কাতারে লক্ষ্য করে চালানো এই অভিযান সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, ৪৮ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা এবং যুদ্ধ শেষ করার পথে একমাত্র বাধা নেতানিয়াহু। তারা আরও বলে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সময় কেনার উদ্দেশ্যে বানানো অজুহাতগুলো শেষ করার সময় এসেছে। সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি