গত সপ্তাহে দোহায় ইসরাইল যে হামলা চালিয়েছে, তার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে কাতারের রাজধানীতে সমবেত হচ্ছেন এই অঞ্চলের নেতারা। হামাসের নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে গত মঙ্গলবার কাতারে হামলা চালায় ইসরাইল। যদিও হামলার লক্ষ্য পূরণ হয়নি, হামলায় পাঁচজন হামাস সদস্য এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
গাজায় ইসরাইলের দুই বছরের গণহত্যার অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে দোহায় হামাস সদস্যরা যখন জড়ো হয়েছিলেন, তখনই এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার কাতারের দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতারা কাতারের রাজধানীতে সমবেত হয়েছেন। ৫৭ সদস্যের ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ২২ সদস্যের আরব লিগের নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
তাদের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। আজ বৈঠকে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পুরো তালিকা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
সম্মেলনে বরাবরের মতো ইসরায়েলকে শুধু নিন্দা না জানিয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে ইরানের নিরাপত্তাপ্রধান আলি লারিজানি ইসলামিক সরকারগুলোর প্রতি একটি সতর্কতা জারি করে বলেন, ‘শুধু বিবৃতি দেওয়ার পরিবর্তে ইসরায়েলের পাগলামির বিরুদ্ধে একটি যৌথ অপারেশন কমান্ড গঠন করা উচিত।’
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ বিন মোহাম্মদ আল-আনসারি বলেন, ‘‘এই শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। দেশটি এ হামলাকে ‘ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।’’
প্রধানমন্ত্রী আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি বলেন, ‘কাতার এই হামলার বিরুদ্ধে একটি যৌথ পদক্ষেপ খুঁজবে, কারণ এই হামলা পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’ গত শুক্রবার তিনি নিউইয়র্কে ট্রাম্পের সঙ্গে হামলার বিষয়ে বৈঠক করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে কাতার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে, যা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধ করা এবং আঞ্চলিক ঐক্য তৈরি করার জন্য কাজ করছে। গতকাল এবং আজকের বৈঠকগুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা মনোভাব এবং ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে বিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে কাতার। তবে এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ আসবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দা ও হতাশা সত্ত্বেও ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলকে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে ইসরায়েল ভ্রমণ করেন। তারা অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পশ্চিম তীরের অনেক অংশ দখল করার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন।
কাতার বলেছে যে, তাদের প্রতিক্রিয়ার একটি অংশ হবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করাও অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: আল-জাজিরা