পুলিশের কাছ থেকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়ে সেগুলো পরে আন্দোলনে নামেন নেপালের এক যুবক -এপি
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার পর নেপালে উত্তেজনা এখনো বিদ্যমান। গত মঙ্গলবার সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানী কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। এর আগে বিক্ষুব্ধ জনতার চাপে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জেনারেশন জেড (জেন জি) দাবি করল, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়ে গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, নেপালে জেন-জি বা তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’ একপর্যায়ে সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন, সরকারি কার্যালয় ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তবে জেন-জির সংগঠকরা এই সহিংসতার দায় অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, ‘সুযোগসন্ধানী’ কিছু গোষ্ঠী তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ‘হাইজ্যাক’ করেছে।
এদিকে, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। কারণ বেশিরভাগ বাসিন্দা কারফিউ মেনে চলেছেন। তবে তখনও কিছু কিছু ভবন থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী রাজধানী জুড়ে চেকপোস্ট স্থাপন করেছে এবং সাধারণ মানুষকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশজুড়ে কারফিউ বহাল থাকবে।
বিক্ষোভে সোমবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে শিশুসহ ১৯ জনের মৃত্যুর পর সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। এই সুযোগে কারাগার থেকে কয়েক শ বন্দি পালিয়ে গেছে বলেও জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুর হয়েছে, ফলে বিচারিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে জেন-জি নেতাদের শান্তি আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, জেন-জির এক প্রতিনিধি বিবিসিকে জানিয়েছেন, ছাত্র নেতারা তাদের দাবিগুলো নতুন করে সাজাচ্ছেন। একইসাথে তারা বলছেন, বুধবার থেকে আর কোনো বিক্ষোভের কর্মসূচি নেই এবং তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করছেন।
এই অস্থিরতার মধ্যেও অনেক নেপালি আশাবাদী, এই আন্দোলন দেশটির পরিবর্তন আনতে পারে। ২৪ বছর বয়সী পারাশ প্রতাপ হামাল এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে হাত লাগিয়েছেন। ১৪ বছর বয়সী কেসাং লামা, যিনি বিক্ষোভে না গেলেও এই পরিবর্তন দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরে নেপালে দুর্নীতি চলছে। এবার পরিবর্তনের সময় এসেছে।’
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মেয়র বালেন্দ্র শাহকে যোগ্য হিসেবে মনে করেন অনেকে। পূর্বাঞ্চলীয় নেপালের বাসিন্দা রাকেশ নিরাউলা বলেন, এই বিপ্লবের পর মানুষ আশাবাদী এবং নেতারা নিজেদের শুধরে নেবেন বলে তার বিশ্বাস।
তবে কেউ কেউ সহিংসতার মাত্রা দেখে হতাশ। নিরাউলা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এমনটা হওয়া উচিত ছিল না।’ উদ্যোক্তা প্রভাত পাউডেলের কাছে সুপ্রিম কোর্টের মতো সরকারি ভবন পুড়িয়ে ফেলা ছিল এক ধরনের বড় ক্ষতি। কারণ এগুলো নিজেদের জাতীয় সম্পদ।
তবে কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। জেন-জির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত, যোগ্য এবং দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং রাজনৈতিক শূন্যতার এই পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে কী ঘটবে, তা বলা মুশকিল।