সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘দুর্গাপূজা’। পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ২ অক্টোবর।
এ উৎসব সামনে রেখে খুলনা শহর ও জেলার নয়টি উপজেলায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী বা ‘পাল’ সম্প্রদায়ের লোকজন।
পূজা শুরুর মাত্র ১৭ দিন বাকি আছে। এমন অবস্থায় সময়মতো প্রতিমা সরবরাহ নিশ্চিত করতে পালরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছর মণ্ডপের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তারা আগের তুলনায় ভালো আয়ের আশা করছেন।
নগরীর ধর্মসভা মন্দিরের প্রতিমা শিল্পী চন্দ্র শেখর পাল জানান, কাদা, দড়ি, খড়, বাঁশ ও পাটের মতো কাঁচামালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘একটি বড় প্রতিমা তৈরিতে পাঁচ থেকে আটজন কর্মীর প্রায় ১২ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে, আর ছোট প্রতিমা তৈরি করতেও প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে।’
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে প্রতিমা বানানোর সঙ্গে যুক্ত চন্দ্র শেখর গত দুই মাসে ইতোমধ্যেই ২৮টি প্রতিমা বানিয়েছেন এবং বর্তমানে আরও সাতটি প্রতিমার কাজ করছেন। তিনি জানান, প্রতিটি প্রতিমার মূল্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে।
তার ধারণা, খুলনায় বর্তমানে প্রায় ১০০টি পাল দল প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন এবং প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
ধর্মসভা মন্দির কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনস ঘোষ জানান, এ বছর অনেক প্রতিমা তৈরিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে এবং দেবী আসল শাড়ি ও অলংকারে সজ্জিত থাকবেন।
শীতলাবাড়ি মন্দির দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অভিজিৎ কুমার দাস অভি জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া এবং পাল, পুরোহিত ও ঢাকি সব কিছু মিলিয়ে এ বছর খরচ অনেক বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর ‘শুভ মহালয়া’র মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কার্যক্রম শুরু হবে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সূত্র: বাসস
খুলনা শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুন্ডু জানান, খুলনা শহরসহ জেলায় ৯৬৫টিরও বেশি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, এর মধ্যে খুলনা শহরে রয়েছে ১২০টি মণ্ডপ। চার শতাধিক পাল এ কাজে যুক্ত রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা ও মণ্ডপের প্রস্তুতিতে শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি তৈরি হবে।’
কুন্ডু আরও জানান, পূজা মণ্ডপের তালিকা খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এবং খুলনার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উৎসবের আগে আমরা তাদের কাছে মতবিনিময় সভা আয়োজন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, পূজা মণ্ডপ এলাকা ও রাস্তা পরিষ্কার রাখা এবং বিজয়া দশমীর রাতে শান্তিপূর্ণ প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি সব কমিটিকে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি যাতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী উপ-কমিশনার (মিডিয়া) খন্দকার হোসেন আহমদ বাসসকে জানান, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহর ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটির সঙ্গে এক সপ্তাহের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।